যে দেশে ‘ফাস্ট ফুড’ নিষিদ্ধ

ফাস্ট ফুড খেতে কে না ভালোবাসেন। মাছে-ভাতে বাঙালি তকমা থাকলেও আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ঢুকে গেছে বিভিন্ন দেশের খাবার। রেস্তোরাঁর মেন্যুতে এখন আর ভাত মাছ পাওয়া যায় না। থাকে চাইনিজ, আমেরিকান কিংবা মেক্সিকান খাবার। নিজের পছন্দ মতো বার্গার পিৎজা না হলে সপ্তাহটাও ভালো কাটে না অনেকের।

 

তবে জানেন কি? বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে যেখানে এসব ফাস্ট ফুড নিষিদ্ধ। তাও মুখে মুখে নয়, একেবারে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এসব খাবার। রাস্তার ধারে কোথাও পাবেন না পিৎজা, বার্গারের দোকান। ম্যাকডোনাল্ডস, পিৎজাহাট, স্টারবার্ক বা বার্গার কিং-এর মতো ভুবন বিখ্যাত ফুড চেনগুলোর খাবারের স্বাদ কেমন তা জানেন না সেদেশের বাসিন্দারা।

ভাবতে পারেন কোনো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের কথা বলছি হয়তো। একেবারেই না, এই দেশটি বিশ্বের অন্যতন উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি বারমুডা। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এর অবস্থান। সমুদ্রের বুকে সরু একফালি এই দেশেই ফাস্ট ফুড বন্ধ করেছে সরকার। প্রায় বছর ৫০ আগে এই নিয়ে আইন পাস করে সেখানকার সরকার। ফলে পৃথিবী বিখ্যাত ফুড চেনগুলোকে চেনেন না এই দেশের বাসিন্দারা।

একেবারে ঝকঝকে এই দেশে বছরে হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে যান। কিন্তু স্বাদ নিতে পারেন না বিশ্ব বিখ্যাত ফাস্ট ফুড খাবারের। এখানে গেলে আপনাকে খেতে হবে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোই। তবে এক সময় এখানে ম্যাকডোনাল্ডসসহ বিশ্বের বিখ্যাত ফুড চেনগুলো ছিল।

১৯৭০ সালে বারমুডা সরকার এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেশ নিষিদ্ধ করে। ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় ফুড চেনগুলো। এর পেছনে বারমুডার সরকার একাধিক যুক্তি দিয়েছে। এর প্রথম কারণ হচ্ছে বিদেশি ফুড চেনগুলো ব্যবসা শুরু করলে স্থানীয় বিক্রেতাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা।

এছাড়া একবার পিৎজা-বার্গার বিক্রি শুরু হলে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যাবে দেশীয় খাবার। স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় খাবারের সঙ্গে দেশের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করে সেদেশের সরকার। এজন্যই মূলত বারমুডা থেকে বিদেশি ফুড চেন এবং ফাস্ট ফুডের দোকান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে এর পেছনে আরও কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য। নাগরিকদের স্বাস্থ্যের দিকটা ভেবেই এসব ফাস্ট ফুড খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। শুধু বারমুডা নয়, বর্তমানে বেশ কিছু রাষ্ট্র এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন আইসল্যান্ড, মেক্সিকো। এ দেশগুলোতে বিদেশি ফুড চেনগুলোর দৌড়াত্ব কম।

পুরোপুরি বন্ধ না হলেও রান্নায় স্থানীয় কৃষিজাত সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার সরকার। ফলে কম দামে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানও। মেক্সিকোতে তো একটি বহুজাতিক ফুড চেন সংস্থা তাদের মেনুকার্ডটাই বদলে দিয়েছে। সেখানে শুধু পাওয়া যায় মেক্সিকান খাবার।

বারমুডা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বর কারণ ছিল ভিন্ন। এ দেশের মূল আয় পর্যটন শিল্প। সরকার একসময় আশঙ্কা করে, বিদেশি ফুড চেনগুলোকে ঢুকতে দিলে দেশে দূষণের পরিমাণ বাড়বে। তখন জঞ্জালের স্তূপে ভরে উঠতে পারে সৈকত। কারণ এই সংস্থাগুলো খাবার প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করে। যা পরিবেশের জন্য হুমকি। বিশেষ করে সমুদ্রের পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র: ফিটনেস ড্রাইভ, রেডডিট

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব সরকারের : জয়নুল আবদিন ফারুক

» ন্যুনতম খাবারও দেওয়া হচ্ছে না ফিলিস্তিনি বন্দিদের

» ঘুম থেকে উঠে দেখি ফেসবুক আইডি ডিজেবল: ভিপি প্রার্থী আবিদ

» সুপ্রভাত বিষন্নতা

» প্রয়োজন ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২ বিলিয়ন আনতেই ‘জান বের হয়ে যায়’

» পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে একটি গোষ্ঠী সাইবার অ্যাটাক দিচ্ছে : ছাত্রদল

» শ্বাসকষ্ট বেড়েছে নুরের, হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৬৭৭ জন গ্রেফতার

» ট্রাম্পের ‘শেষ সতর্কবার্তার’ পর আলোচনায় আগ্রহী হামাস

» ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই: ডিএমপি

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যে দেশে ‘ফাস্ট ফুড’ নিষিদ্ধ

ফাস্ট ফুড খেতে কে না ভালোবাসেন। মাছে-ভাতে বাঙালি তকমা থাকলেও আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ঢুকে গেছে বিভিন্ন দেশের খাবার। রেস্তোরাঁর মেন্যুতে এখন আর ভাত মাছ পাওয়া যায় না। থাকে চাইনিজ, আমেরিকান কিংবা মেক্সিকান খাবার। নিজের পছন্দ মতো বার্গার পিৎজা না হলে সপ্তাহটাও ভালো কাটে না অনেকের।

 

তবে জানেন কি? বিশ্বের এমন একটি দেশ আছে যেখানে এসব ফাস্ট ফুড নিষিদ্ধ। তাও মুখে মুখে নয়, একেবারে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এসব খাবার। রাস্তার ধারে কোথাও পাবেন না পিৎজা, বার্গারের দোকান। ম্যাকডোনাল্ডস, পিৎজাহাট, স্টারবার্ক বা বার্গার কিং-এর মতো ভুবন বিখ্যাত ফুড চেনগুলোর খাবারের স্বাদ কেমন তা জানেন না সেদেশের বাসিন্দারা।

ভাবতে পারেন কোনো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের কথা বলছি হয়তো। একেবারেই না, এই দেশটি বিশ্বের অন্যতন উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি বারমুডা। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এর অবস্থান। সমুদ্রের বুকে সরু একফালি এই দেশেই ফাস্ট ফুড বন্ধ করেছে সরকার। প্রায় বছর ৫০ আগে এই নিয়ে আইন পাস করে সেখানকার সরকার। ফলে পৃথিবী বিখ্যাত ফুড চেনগুলোকে চেনেন না এই দেশের বাসিন্দারা।

একেবারে ঝকঝকে এই দেশে বছরে হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে যান। কিন্তু স্বাদ নিতে পারেন না বিশ্ব বিখ্যাত ফাস্ট ফুড খাবারের। এখানে গেলে আপনাকে খেতে হবে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোই। তবে এক সময় এখানে ম্যাকডোনাল্ডসসহ বিশ্বের বিখ্যাত ফুড চেনগুলো ছিল।

১৯৭০ সালে বারমুডা সরকার এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দেশ নিষিদ্ধ করে। ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় ফুড চেনগুলো। এর পেছনে বারমুডার সরকার একাধিক যুক্তি দিয়েছে। এর প্রথম কারণ হচ্ছে বিদেশি ফুড চেনগুলো ব্যবসা শুরু করলে স্থানীয় বিক্রেতাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা।

এছাড়া একবার পিৎজা-বার্গার বিক্রি শুরু হলে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যাবে দেশীয় খাবার। স্থানীয় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় খাবারের সঙ্গে দেশের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করে সেদেশের সরকার। এজন্যই মূলত বারমুডা থেকে বিদেশি ফুড চেন এবং ফাস্ট ফুডের দোকান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে এর পেছনে আরও কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বাস্থ্য। নাগরিকদের স্বাস্থ্যের দিকটা ভেবেই এসব ফাস্ট ফুড খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। শুধু বারমুডা নয়, বর্তমানে বেশ কিছু রাষ্ট্র এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন আইসল্যান্ড, মেক্সিকো। এ দেশগুলোতে বিদেশি ফুড চেনগুলোর দৌড়াত্ব কম।

পুরোপুরি বন্ধ না হলেও রান্নায় স্থানীয় কৃষিজাত সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার সরকার। ফলে কম দামে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানও। মেক্সিকোতে তো একটি বহুজাতিক ফুড চেন সংস্থা তাদের মেনুকার্ডটাই বদলে দিয়েছে। সেখানে শুধু পাওয়া যায় মেক্সিকান খাবার।

বারমুডা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে সবচেয়ে বর কারণ ছিল ভিন্ন। এ দেশের মূল আয় পর্যটন শিল্প। সরকার একসময় আশঙ্কা করে, বিদেশি ফুড চেনগুলোকে ঢুকতে দিলে দেশে দূষণের পরিমাণ বাড়বে। তখন জঞ্জালের স্তূপে ভরে উঠতে পারে সৈকত। কারণ এই সংস্থাগুলো খাবার প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার করে। যা পরিবেশের জন্য হুমকি। বিশেষ করে সমুদ্রের পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র: ফিটনেস ড্রাইভ, রেডডিট

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com